বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ | প্রার্থী, প্রচার কিছুর দেখা নেই, তবু বিএসএফ-এর অনুমতি নিয়ে ভোট দিতে আসবেন ছিটমহলের বাসিন্দারা

Pallabi Ghosh | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৭ : ২৪Pallabi Ghosh


পল্লবী ঘোষ, তেরো ঘর: রাজনৈতিক দলের পতাকা থেকে ভোটপ্রার্থীদের দেওয়াল লিখন, "তেরো ঘরে" পা রাখলে কোনওটাই চোখে পড়বে না। ভারতীয় ভূখণ্ডের এই ছিটমহলে নেই ভোটের হাওয়া। কোনও দলের প্রার্থীদের নিয়ে এখানে নেই উৎসাহ। কালিয়ানি থেকে নৌকায় করে দুটো বাওড় পেরিয়ে যেতে হয় "তেরো ঘর"। তার পাশে নাওভাঙা নদী। তার আগে "দুই ঘর"। এটি বনগাঁর ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের অধীনে। ছিটমহলের তিনদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত। জিরো পয়েন্টের ঠিক পাশেই এই ছিটমহল। তাই বিএসএফ ২৪ ঘণ্টা সজাগ। ভারতের নাগরিক হলেও মূল ভূখণ্ডে আসতে সবসময় বিএসএফের অনুমতি নিতে হয় "তেরো ঘর"-এর বাসিন্দাদের। ভোট দিতে গেলেও অনুমতি নিয়ে, বাওড় পেরিয়ে পিরোজপুর কেন্দ্রে পৌঁছতে হয়। জীবনযাপন যে সহজ নয়, তা পরতে পরতে টের পাওয়া যায়।
"তেরো ঘর"-এর তেরোটা পরিবার মিলিয়ে মোট ৬৫ জনের বাস। সকলেই চাষাবাদ করেন। প্রত্যেকের পরিচয়পত্রসহ যাবতীয় নথিপত্র জমা থাকে বিএসএফের কাছে। বাজারঘাট থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, কলেজ, অনুমতি ছাড়া মূল ভূখণ্ডের কোথাও যাতায়াত করতে পারেন না বাসিন্দারা।
বাওড়ের পাশেই "তেরো ঘর"-এর বাসিন্দা রূপঙ্কর হালদারের সঙ্গে কথা হল বেশ খানিকক্ষণ। ৪১ বছরের রূপঙ্কর জানালেন, দেশভাগের আগে থেকেই তাঁর পরিবার "তেরো ঘর"-এ থাকতে শুরু করে। রূপঙ্কর জানালেন, "ভোট এলে একবার মাত্র প্রার্থীরা এসে ঘুরে যান। তাও সব দলের নয়। বহু বছর আগে হাতে গোনা কয়েকজন বাম প্রার্থী এসেছেন। ১০ বছরে কোনও বিজেপি প্রার্থীর মুখ দেখা যায়নি। ভোটের সময় একমাত্র তৃণমূল প্রার্থীকে দেখা যায়। সত্যি বলতে কী, কোনও প্রার্থীকে নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ, আমাদের কথা দিয়ে কেউ কথা রাখেন না। দাবি শুনে গেলেও, বাওড় পেরোতে পেরোতে হয়তো ভুলেও যান। ভোট দিই। কিন্তু প্রতিশ্রুতিতে আর মন ভোলে না।"
ছিটমহলের আরেক বাসিন্দা সমীর হালদার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। মেঘলা দুপুরে তাঁর চোখেমুখে বিষণ্ণতার ছাপ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সমীর বললেন, "কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাই না। যাবতীয় অভাব, অভিযোগের কথা পঞ্চায়েত প্রধানকে বলি। রাজ্য সরকারের কিছু প্রকল্পের সুবিধা পাই। সেটাই আমাদের জন্য অনেক।" সমীর আরও জানালেন, বিকেলের পর মূল ভূখণ্ডে যাওয়া যায় না। রাতে কেউ খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে অনুমতি নিয়ে এক ঘণ্টা দূরে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে যেতে হয়। বর্ষার সময় রাস্তাঘাটের বেহাল দশা হয়। বাড়িঘরের অবস্থাও খারাপ। এভাবেই চরম দুর্দশায় কাটে দিনকাল। ভোটপ্রার্থীরা এলে অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু তার কোনও সুরাহা মেলে না।
"তেরো ঘর"-এর উল্টোদিকে কালিয়ানির বাসিন্দারাও সেই দুর্দশার কথাই বললেন। ইতিমধ্যেই পিরোজপুর, জয়ন্তীপুর ছেয়ে গেছে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি, তৃণমূল প্রার্থীর নামের দেওয়াল লিখনে। দিন কয়েক পরে হয়তো প্রচার করতেও এই এলাকায় আসবেন তাঁরা। কিন্তু পাশেই "তেরো ঘর"-এর দিকে ফিরে তাকাবেন কি কেউ? ভারতের নাগরিক হয়েও "তেরো ঘর"-এর বাসিন্দারা কি বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবেন? ভোটের আবহে আর একবার আশায় বুক বাঁধছেন এঁরা।




বিশেষ খবর

নানান খবর

শীঘ্রই আসছে...

নানান খবর



সোশ্যাল মিডিয়া



04 24